মহান স্রষ্টার পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ মানুষ। আর মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো গাছ। যেজন্য বলা যায়, গাছ হলো সমগ্র সৃষ্টিজীবের পরম বন্ধু। কারণ জীবনের জন্য প্রতি মুহূর্তে যে বস্তুটি বেশি প্রয়োজন তা হচ্ছে- অক্সিজেন। সেটিও প্রদান করে এই গাছ। গাছ পৃথিবীর স্থায়িত্ব আর সমস্ত সৃষ্টিজীবের জীবনের নিরাপত্তার প্রতীক। বিষয়টি অনুধাবন করেই মহানবী (সা.) বলেছেন, যদি তুমি নিশ্চিতভাবে জানো যে কালই কিয়ামত (ধ্বংসযোগ্য) হবে; তবু আজই গাছ লাগাও। তিনি জানতেন, মানুষকে কেন্দ্র করেই সমগ্র সৃষ্টিজগতের এত আয়োজন।
একবিংশ আধুনিক সভ্যতার যুগে মানুষের জীবনের উন্নয়ন উপাত্ত কীভাবে আরও বৃদ্ধি ও ফলপ্রসূ করা যায়, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়ে। তারা মানবসম্পদের নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব জীবন-জীবিকা, নতুন নতুন পদ্ধতি ও কৌশল প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের বিষয়টি একটি জরুরি বিষয় বলে অবিহিত করছেন।
১. ১৯৯০ সালে UNDP-এর রিপোর্টে বলা হয়, মানব উন্নয়ন এমন একটি প্রক্রিয়া, যার গুরুত্ব হলো সমগ্র সম্পদের সম্প্রসারণ ও ব্যবহার নিশ্চিতকারণ।
২. ১৯৯২ সালে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স, যা মানব উন্নয়ন সূচক নির্ধারিত হয়। সংক্ষেপে বলা হয়, HWI- এগুলোর মধ্যে জীবনের দীর্ঘ স্থায়িত্ব, দক্ষতা, উন্নয়নজ্ঞান, আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান অন্যতম।
৩. সাধারণ কথায় মানবসম্পদ উন্নয়ন People Contred Developmant অর্থাৎ উন্নয়ন ব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ মানবকেন্দ্রিক।
জীবন-জীবিকার জন্য গাছ কেন প্রয়োজন : ১. পৃথিবীতে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য জীববৈচিত্র্য অপরিহার্য, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য, পানীয়, ওষুধ, পথ্য, নিরাপত্তা, ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী ও ছায়া প্রদান করে পৃথিবীকে শীতল করে।
২. মানুষের জীবন-জীবিকা, উন্নয়ন, দারিদ্র্য ও অধপতন ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে গোটা পৃথিবীর বুদ্ধিজীবী আলোকিত সব মানুষ ভাবছেন- তারা যতটুকু আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন, তার চেয়ে হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন বেশি। কারণ প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণে বিপরীতে নতুন প্রজন্মের মানুষের অদূরদর্শিতা, অমানবিক জীবনাচরণ, অমিতাচার তাবৎ বিশ্ব আজ ভারসাম্য হারাচ্ছে।
৩. সমস্ত সৃষ্টিজগৎ স্রষ্টার নিয়মনীতি আজবদি মেনে চললেও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ প্রকৃতিতে রূপান্তর ঘটাচ্ছে। ফলে প্রকৃতিও বিরূপ প্রক্রিয়ায় তার জবাব দিচ্ছে, যা সাধারণ জ্ঞানে অনুধাবন করা অসম্ভব।
বৈশ্বিক উষ্ণতায় বিপন্ন পৃথিবী : ১. ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশেই প্রায় ৪ কোটি ৩২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে, যা মোট জনসংখ্যার ৩০%।
২. বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০৫০ সালে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৩ লাখে।
৩. পৃথিবীতে মানুষ যে হারে বাড়ছে, গাছপালা ও পরিবেশ সে হারে বাড়ছে না; যার ফলে নির্মল সবুজ পৃথিবীর বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও কার্বন বৃদ্ধিজনিত কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, সিডর, আইলা, জলোচ্ছ্বাস, খরা, বন্যা, নদীভাঙন ও ভূমিকম্প। এতে করে গোটা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীকূলের প্রাণ সংহার ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বনজ, কৃষিজাত দ্রব্য, স্থাবর-অস্থাবর বিশাল সম্পদরাশি।
৪. ওয়াল্ড ভিশন, ওয়াল্ড ফুড প্রোগ্রাম, বিশব্যাংক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দরিদ্রের হার বেশি। শুধুমাত্র একটি উপকূলীয় জেলাতেই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৮ লাখে। বাংলাদেশেই ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার, ১৯৭০ সালে সাইক্লোনে ৫ লাখ, ২০০৯ সালে আইলায় ৩০০ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। গত মে ২০১৬ সালে ৪ দিনের ব্যবধানে বজ্রপাতেই মৃতের সংখ্যা ৯১ পৌঁছায়।
৫. ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত ১৫তম বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বনেতৃবৃন্দ আইপিসিসির ২০০৭ সালে প্রকাশিত চতুর্থ এসেসমেন্ট রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার সচিত্র গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেন।
৬. ২০১০ সালে ব্রিটেনের ঝুঁকি বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ‘ম্যাপেলক্রপ’ জলবায়ুবিষয়ক ৪০টির বেশি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী ৩০ বছরে সর্বাধিক ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে ১০টি দেশই এশিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে।
৭. ২০১১ সালে দ্য ফাস্ট বাংলাদেশ ফরেস্ট্রিক কংগ্রেসের তথ্যমতে জানা যায়, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বনভূমি বাংলাদেশে থাকা দরকার ২৫%, সেখানে অর্থমন্ত্রী বললেন ৯% আছে।
৮. পরিবেশবাদিদের তথ্যমতে জানা যায়, দেশে প্রতিদিন প্রায় ১.৫ লাখ গাছ কর্তন হচ্ছে। আর লাগানো হচ্ছে মাত্র ৩০ হাজার। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরে দেশ মরাভূমিতে পরিণত হবে।
৯. গত ১৭-০৯-২০১৩ সালে নয়া দিগন্ত পত্রিকায় প্রকাশিত ‘নদীভাঙন ও সর্বহারা মানুষ প্রবন্ধে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, প্রতি বছর নদীভাঙনে ১ লাখ লোক গৃহহারা হচ্ছে- প্রায় ১০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি ও গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার।’
জীবন-জীবিকা ও নৈসর্গিকতায় গাছের গুরুত্ব : ১. এ শতাব্দীর বিশ্বায়নে সবুজ পৃথিবী বিনির্মাণে বিশ্ব আজ নড়েচড়ে বসেছে। সর্বত্র রব উঠেছে- ‘জীবনের জন্য গাছ, জীবিকার জন্য গাছ’। কারণ মানুষ ও জীবজাতি বাঁচতে চাইলে দুটো বস্তু খুবই অত্যাবশ্যক তার একটি হলো- অক্সিজেন; অপরটি হলো খাদ্য। এ দুটো বস্তুই নিশ্চিত করে গাছ।
২. বিশ্ব পরিবেশ দিবস ৫ জুন ২০১৪ সালে প্রকাশিত এক প্রকাশনায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবুদল হামিদ তার এক বাণীতে যথার্থই বলেছেন- বাংলাদেশের সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য আমাদের আবহমানকালের ঐতিহ্য। এটি সংরক্ষণ করা আমাদের জাতীয় কর্তব্য। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিধায় আমাদের উৎকণ্ঠা সর্বাধিক। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী বৈশ্চিক উষ্ণতা হ্রাসের আন্দোলনকে জোরদার করা আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
৩. এশিয়ার জলবায়ুবিষয়ক অন্যতম কণ্ঠস্বর ও গবেষক এএনএম মনিরুজ্জামান তার ৩৮ বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় প্রথম আলোর ২৯ নভেম্বর ২০১৫ সালে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে যেসব দেশকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলবে, তার মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
৪. গত ১৪-০১-২০১৫ সালে প্রকাশিত প্রথম আলো পত্রিকায় ১৫ পৃষ্ঠাব্যাপী ‘প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন ও বাংলাদেশ’ বিষয়ক গোলটেবিল আলোচনা সভায় দেশের বিজ্ঞব্যক্তিত্ব ও পরিবেশবাদির মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তাদের নিজ নিজ ছবিসহ মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। তারা মনে করেন, উন্নত পরিবেশ সুস্থ জীবনের পূর্বশর্ত, আধুনিকায়ন, নগরায়ন, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার করে অর্থনৈতকি সমৃদ্ধি অর্জন করার বিষয়টি টেকসই হবে- যদি বৃক্ষরোপণ বনায়ন করে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নিন্ত্রণে রাখা যায়।
৫. পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাংবাবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সরকার সংবিধানে ১৮ (ক) অনুচ্ছেদে সংযোজন করেছে। উক্ত অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বিধান করবে।
৬. সেক্ষেত্রে IPCC আশঙ্কায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০১৪ সালকে SIDS ঘোষণা করার বিষয়টি মাথায় রেখেই Bangladesh climate change strategy and Action Plan প্রণয়ন করেছে এবং Bangladesh climate change Resilience fund (BCCF) গঠন করেছে।
৭. এছাড়া বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে, যা আশীর্বাদযোগ্য। যেমন Bangladesh climate change Trust (BCCT) কে গত ৭ বছরে ৩ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা দিয়েছে সরকার।
৮. বাংলাদেশ সরকারের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যবিমোচন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণ। দারিদ্র্যের জন্য সহায়ক জলবায়ু পরিবর্তন কৌশলের মাধ্যমে তা অর্জিত হওয়া সম্ভব। এই কৌশল অভিযোজন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, কম কার্বন উৎপাদন প্রশমন, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং পর্যাপ্ত অর্থ জোগানসহ আধুনিক নতুন নতুন কৌশল ও সুবিধার বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
গাছের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার মৌলিক কারণ : ১. খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা ও সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণসহ জননিরাপত্তা, মানবাধিকার তথা মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে। সব প্রাপ্তি নিশ্চিত হলেও প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারালে নিমিষেই সব প্রাপ্তি ধূলিসাৎ হতে পারে। কাজেই টেকসই ভারসাম্য পৃথিবী বিনির্মাণে বনায়ন অত্যাবশ্যক।
২. বিশ্বের অন্যান্য দেশের বুদ্ধিজীবী-পরিবেশবাদিদের ন্যায় দেশের সুশীলসমাজ বিশ্বায়নে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়টির গুরুত্ব ইতোমধ্যেই যথাযথভাবে উপলব্ধি করছেন। তারা সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে সমাজ ও রাষ্ট্রভিত্তিক উন্নয়নশীল দেশের সাথে মতবিনিময় করে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা রপ্ত করা।
৩. দৈনিক প্রথম আলোর ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালের সংখ্যায় বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রাইজ ওয়াটার হাউজ কুপারস (পিডব্লিউসি) বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতা (পিপিপি) বিচারে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৩তম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ, যা অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো উন্নত ও অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। এর উদাহরণস্বরূপ দেখানো হয় যে, ভেষজ উৎপাদন ও বিদেশে রফতানি জিডিপি ২০১৪ সালে ছিল ৫৩ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার; ২০৩০ সালে এটি দ্বিগুণ হয়ে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০০ কোটিতে পৌঁছবে। আর ২০৫০ সালে তা আরও বেড়ে গিয়ে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।
প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ : ১. বিশ্ব যখন প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের ওপর ভর করে এগিয়ে চলেছে, সেখানে বাংলাদেশের অর্থ উপার্জনের উৎসগুলো ঝিমিয়ে পড়ছে একের পর এক। দেশের চা, চামড়া, মৎস্য, চিনি, পাট, রাঁধুনী মশলা তথা কৃষিশিল্প; এমনকি পোশাক শিল্পের নিম্নগামিতা জীবন-জীবিকায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
২. দেশের ৫ কোটি যুবক আজ চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত ও কারিগরি যুব ও যুবারা চাকরির আশায় শহরমুখী হচ্ছে এবং জমি-জিরাত বিক্রি করে মোটা অংকের ঘুষ প্রদানের প্রস্তুতিতে অভ্যস্ত হচ্ছে। চাকরি নামক সোনার হরিণ ধরতে অনেকেই সর্বস্বান্ত এবং নিরূপায় হয়ে অবৈধ পন্থায় সাগরপথে ভিন দেশে অজনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ মূল্যবান জীবন হারিয়েছেন।
৩. এমতাবস্থায় দেশের কর্মক্ষম ৫ কোটি বেকার যুব ও যুবাসহ অন্যান্য আরও বেকার মানুষের সম্মানজনক কর্মসংস্থান সৃষ্টি খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৫-১০ বছর মেয়াদি ‘সোনার বাংলায় বনায়ন কর্মসূচি’ বা প্রকল্প চালু করে বৃক্ষরোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে উল্লেখিত জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা অত্যাবশ্যক। এতে করে রুটি-রুজি, জীবন-জীবিকা দুটোই নিশ্চিত হতে পারে।
৪. দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি, যে মাটিতে একটি চেপ্টা শুকনো লাউয়ের বীজ বপন করলে অল্প দিনেই বড় বড় লাউ ও সবজি উৎপন্ন হয়, সেদেশে মাটিকে ব্যবহার করেই আমাদের এগোতে হবে, দোসরা কোনো পথ আর নেই। কাজেই দেশের প্রতিটি এলাকার আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জায়গাকে কাজে লাগাতে দেশের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অপরিহার্য।
৫. আমাদের দেশে এখনও যে পরিমাণ ভেষজ ও ঔষুধি গাছ আছে, সে গাছের ভেষজ কাঁচামাল সংগ্রহ, পরিশোধন ও ওষুধ তৈরিতে মনোনিবেশ করতে সবকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এই ওষুধ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন। মূলত এ শিল্পকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হলে জীবন-জীবিকা দু’কূলই রক্ষা হবে।
বৃক্ষ ও ওষুধ শিল্প সম্প্রসারণে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ব্যাপক কর্মসূচি নেয়ার মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী সোনার চেয়ে দামি গুণগতমানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদন করে বিদেশে রফতদানি করে প্রচুর অর্থ উপার্জনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার যথেষ্ট সুযোগ বিদ্যমান। এতে করেও জীবন-জীবিকা সুরক্ষা হবে।
উপসংহার : একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের জীবন-জীবিকার নিত্যদিনের বন্ধু গাছের ব্যাপক উৎপাদন করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ ও ভারসাম্য রক্ষার কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কার্বনমুক্ত সবুজ নৈসর্গিক পৃথিবী বিনির্মাণে সারা বিশ্বকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। আসুন, ‘বৃক্ষরোপণে একসাথে লড়ি, নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ি।’

Post a Comment

Thank You For Your Comment.

Previous Post Next Post